রবীন্দ্র-আলোকে ললিত ভারতী—সমীপেষু দাস

Image
  রবীন্দ্র-আলোকে ললিত ভারতী কাব্যসরস্বতী কোনো মন্দিরের বন্দিনী দেবতা নন                                                                                                       ( মধুমঞ্জরি, বনবাণী )                        রবীন্দ্রনাথ কাব্য ও সংগীতকে কখনওই পৃথক ব’লে ভাবতেন না। প্রথম জীবনের তাঁর কাব্যগুলির নামকরণ-ই তার যথাযথ প্রমাণ – সন্ধ্যাসংগীত, প্রভাতসংগীত, ছবি ও গান, কড়ি ও কোমল  ইত্যাদি। এমনকি যে কাব্যের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান; তা-ও গীতাঞ্জলি। তাঁর রচিত অসংখ্য কবিতা-ই গানের রূপ পেয়েছে। ব্যক্তিজীবনে তিনি তাঁর কাব্যরচনার প্রেয়সীরূপে পেয়েছিলেন তাঁর ‘নতুন বৌঠান’ তথা কাদম্বরী দেবী-কে। তিনি যখন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে আসেন; তখন বয়সে তিনি বালিকা। তাই সেই ছবিই পরবর্তীত...

মাতৃরূপেণ—১২, 'অন্নপূর্ণে সদাপূর্ণে....'—শ্রীজীবশরণ দাস

 'অন্নপূর্ণে সদাপূর্ণে....'


শ্রীজীবশরণ দাস

নিতাইবাড়ি। বীরচন্দ্রপুর। বীরভূম। 


[গতবার প্রথম "মাতৃরূপেণ" হাতে পেয়েই খুব খুশি হয়ে বললেন—"এত সুন্দর একটা জিনিস"। তারপরেই কলকাতার খড়দহ আশ্রমবাড়িতে পরদিন নিয়ে যাবার জন্য ১০০ টি পত্রিকা চাইলেন। পরদিন সকালে একটি গাড়ি করে ৮০ টি পাঠানো হল। ফোনে বললেন—"Why not hundred?" বললেন আমি খড়দহে কিছু মানুষকে পড়তে দেবো। সামনেই জগদ্ধাত্রী পুজো, তাতেও কিছু বিলিয়ে দেবো। খুব মন দিয়ে শেষ পাতায় "চণ্ডী চয়ন"-নামে দেওয়া সপ্তশতীর মূল্যবান  শ্লোকগুলো পড়ছিলেন। 

আর আমাদের কে বা পথ দেখাবেন? আমরা যে অভিভাবকহারা হলাম। আজ ওপার থেকেই তিনি হয়তো পড়বেন এই শারদীয় অর্ঘ্য। 

অন্নপূর্ণারূপী দুর্গার মন্ত্রপ্রাপ্তি বিশেষভাবে ঘটেছিল শ্রীপাদ বাবাজী মশাইয়ের জীবনে। তাঁর কলমে রচিত এই প্রাসঙ্গিক একটি কবিতা তাঁরই পুণ্য স্মরণে "মাতৃরূপেণ"-র পাতে প্রকাশিত হল। জয় জয় নিতাইচাঁদ।] 


ব্রজের গাঁঠুলি গ্রামে যুগলকিশোর

সখী সনে আছিলেন বিভ্রমবিভোর

দ্বাপরে। অলক্ষ্যে সখীগণ রসছলে

দোঁহার বসনে গাঁঠ দিলা কুতূহলে।।


বিদায় বেলায় দোঁহে পৃথক হইতে

উত্তরীয়ে গাঁঠ দেখি লাগিলা হাসিতে।

ব্রজ-পরিক্রমাপথে সে গ্রাম গাঁঠুলি

অদ্যাবধি বিরাজিত—কৃষ্ণলীলাস্থলী।।


আজও সমাগতজন ভক্তিযুক্ত প্রাণে

দর্শন করেন সেথা যুগলরতনে।

স্মরণে মননে হয় সরসানুভূতি;

এ হেতু তথায় ভক্তগণ-গতাগতি।।


কৃপানিধি প্রভু মোর শ্রীমৎ রামদাস

পরিক্রমা কালে যবে গাঁঠুলিতে বাস

করেন, সে কালে অন্নপূর্ণা নিশাশেষে

সাধুজন দ্বারে তাঁরে মন্ত্র উপদেশে।। 


প্রভু কন কোন প্রয়োজন মোর ইথে?

কহেন আদিষ্টজন, লাগিবে সেবাতে—

বারবার অনুরুদ্ধ হলেন যখন

সেবা-অনুকূলে তবে করিলা গ্রহণ।। 


এ প্রসঙ্গ যবে চিতে হইল উদয়

গুঞ্জরিল কেহ প্রাণে—"বাবাজী ম'শায়

সেব্যবুদ্ধি করিতেন শ্রীঅন্নপূর্ণারে

অদ্যাবধি তাঁর চিত্রসেবা শ্রীমন্দিরে।।


আনুগত্যে দেখ সবে দু'নয়ন মেলে

পাঠবাড়ী-মন্দিরের দক্ষিণ দেয়ালে

'গৌরপাদপদ্ম' সন্নিধানে বিরাজিতা

অন্নপূর্ণা ঠাকুরাণী—চিত্রপটভূতা।।


গুরুগণ-প্রীতে নাম ও মহাপ্রসাদে

প্রসন্নিয়া অন্নপূর্ণে পূর মনোসাধে।

পরমকরুণ নাথ—শ্রীগুরু তোমার

প্রসন্ন হবেন; ইথে কল্যাণ সবার"।।


এবে সবাপাশে যাচি সাধনশকতি

শিখায়ে এ অভাগারে শুদ্ধ সেবানীতি,

সর্বথা প্রসন্নচিতে থাকি পাশে পাশে

ঊন দূরি যোগ্য করি পূর অভিলাষে।।


(চিত্র—বরাহনগর পাঠবাড়ী আশ্রমে বাবাজী মশাইয়ের সেবিত মা অন্নপূর্ণার চিত্রপট।)   

Comments

Popular posts from this blog

কালীকথা-৩—পরমব্রহ্ম শবরূপ তাই — ড. অর্ঘ্য দীপ্ত কর

মাতৃরূপেণ—৫, বঙ্গ-মননে পরিবার-সমন্বিতা দুর্গা দর্শন—রাধাবিনোদ ঠাকুর