রবীন্দ্র-আলোকে ললিত ভারতী—সমীপেষু দাস

Image
  রবীন্দ্র-আলোকে ললিত ভারতী কাব্যসরস্বতী কোনো মন্দিরের বন্দিনী দেবতা নন                                                                                                       ( মধুমঞ্জরি, বনবাণী )                        রবীন্দ্রনাথ কাব্য ও সংগীতকে কখনওই পৃথক ব’লে ভাবতেন না। প্রথম জীবনের তাঁর কাব্যগুলির নামকরণ-ই তার যথাযথ প্রমাণ – সন্ধ্যাসংগীত, প্রভাতসংগীত, ছবি ও গান, কড়ি ও কোমল  ইত্যাদি। এমনকি যে কাব্যের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান; তা-ও গীতাঞ্জলি। তাঁর রচিত অসংখ্য কবিতা-ই গানের রূপ পেয়েছে। ব্যক্তিজীবনে তিনি তাঁর কাব্যরচনার প্রেয়সীরূপে পেয়েছিলেন তাঁর ‘নতুন বৌঠান’ তথা কাদম্বরী দেবী-কে। তিনি যখন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে আসেন; তখন বয়সে তিনি বালিকা। তাই সেই ছবিই পরবর্তীত...

মাতৃরূপেণ—১ বৈষ্ণব সাধক শ্রীরামকানাই ঠাকুরের অপরাজিতা পূজা


 
বৈষ্ণব সাধক শ্রীরামকানাই ঠাকুরের অপরাজিতা পূজা           

                   


                —পার্থ মুখোপাধ্যায়, শ্রীপাট মুলুক, বীরভূম।

শ্রীশ্রীনিতাই-চৈতন্যপ্রিয়তম পার্ষদবরেণ্য দ্বাদশ গোপালের তৃতীয় গোপাল ধনঞ্জয় পণ্ডিত প্রভুর পৌত্র রামকানাই ঠাকুর প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে এই মুলুক শ্রীপাট প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বীরভূম জেলার এটি একটি সুচিহ্নিত বৈষ্ণবপীঠ। এই জেলার একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ আছে—

"মুলুকের অপরাজিতা, মঙ্গলডিহির রাস।              ভুরকুনোর ডেঙোঠাকুর শুনতে উপহাস।" অর্থাৎ ব্যঙ্গাত্মক কথা, মুলুক বৈষ্ণব পাট হয়েও এখানে মা অপরাজিতা পূজা উদযাপন হয় খুব নিষ্ঠা সহকারে। কৃষ্ণানবম্যাদি কল্পারম্ভে মায়ের বোধন আসেন, ঐদিন ঢাক,ঢোল, কাঁসর, ঘণ্টা, শ্রীখোল-করতাল সহযোগে মা কে নিকটবর্তী রামেশ্বর শিব মন্দির থেকে আনয়ন করা হয়। এরপর দুর্গা নবমী পর্যন্ত প্রত্যেকদিন শ্রী শ্রী চণ্ডীপাঠ ও পূজা হয়। দশমীর দিন অপরাজিতা পূজার পর মা কে রামেশ্বরজীর কাছে পুনরায় পৌঁছে দেওয়া হয়। প্রত্যেকদিনের পূজার সামগ্ৰী প্রত্যেক সেবাইত বাড়ি থেকে আসে। কথিত আছে রামকানাই ঠাকুর রাধাবল্লভ মন্দির প্রতিষ্ঠা কালে খননকার্য চলার সময় মাটির নিচে এই চতুর্ভুজ পাথরে খোদিত দেবীমূর্তি প্রাপ্ত হন। পরে মূলমন্দিরে প্রবেশপথের ডানদিকে অশ্বত্থ গাছের নিচে ছোট মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। নিত্যানন্দ আদর্শে অনুপ্রাণিত রামকানাই ঠাকুর তাঁর শ্রীগুরু পরম্পরায় শক্তি আরাধনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন অলৌকিক শক্তির অধিকারী। মা অপরাজিতার কৃপায় তিনি অসাধ্য সাধন করেছিলেন। আমরা বর্তমানে তাঁরই কৃপা-ছত্রছায়ায় বেঁচে আছি। ধনঞ্জয় প্রভুর আর এক শাখা শ্রীপাট পুরুলিয়ার বেগুনকোদরে মা দুর্গার আরাধনা খুব ঘটা করে হয়। অপরাজিতা স্তোত্রে আমরা দেখি- 

"শৃণুধ্বং মুনয়ঃ সর্বে সর্বকামার্থসিদ্ধিদাম। অসাধ্যসাধিনীং দেবীং বৈষ্ণবীমপরাজিতাম।।"

      
  মা অপরাজিতা মূর্তি  


অর্থাৎ মা অপরাজিতা স্বয়ং বৈষ্ণবী। আর বৈষ্ণবপীঠে বৈষ্ণবীর আরাধনা —এ তো শাস্ত্রসম্মত। তাছাড়া কৃষ্ণমন্ত্রের অধিষ্ঠাত্রী দেবী স্বয়ং মা দুর্গা। ভগবানের শ্রেষ্ঠলীলা রাসলীলায় গোপীগণ তাদের মনোরথ পূরণের জন্য মা ক্যাতায়নীর ব্রত করলেন, কারন মা যোগমায়াই হলেন ভগবৎ প্রাপ্তির একমাত্র পথ। বরানগর পাঠবাড়ি থেকে একচক্রা, অদ্বৈত প্রভুর শ্রীপাট শান্তিপুর সহ অনেক বৈষ্ণবপীঠে দুর্গাপূজা হয়ে আসছেন। আসন্ন শারদোৎসবে সকলের চরণে দণ্ডবত প্রণতি জানাই। জয় মা অপরাজিতা। জয় নিতাই। জয় প্রভু ধনঞ্জয়। জয় রামকানাই।

Comments

  1. Darun likhechhen Dada!
    Jay Netai! Jay Maa Aparajita!!

    ReplyDelete
  2. জয় রাামকাানাাই ঠাাকুরের জয় !

    ReplyDelete
  3. খুব ভালো লাগলো মুলুক শ্রীপাটে মায়ের আরাধনার কথা জানতে পেরে,🙏আর মা অপরাজিতার দর্শন খুব সুন্দর 🙏🙏🙏জয় নিতাই
    জয় নিতাই

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

মাতৃরূপেণ—১২, 'অন্নপূর্ণে সদাপূর্ণে....'—শ্রীজীবশরণ দাস

কালীকথা-৩—পরমব্রহ্ম শবরূপ তাই — ড. অর্ঘ্য দীপ্ত কর

মাতৃরূপেণ—৫, বঙ্গ-মননে পরিবার-সমন্বিতা দুর্গা দর্শন—রাধাবিনোদ ঠাকুর