রবীন্দ্র-আলোকে ললিত ভারতী—সমীপেষু দাস

Image
  রবীন্দ্র-আলোকে ললিত ভারতী কাব্যসরস্বতী কোনো মন্দিরের বন্দিনী দেবতা নন                                                                                                       ( মধুমঞ্জরি, বনবাণী )                        রবীন্দ্রনাথ কাব্য ও সংগীতকে কখনওই পৃথক ব’লে ভাবতেন না। প্রথম জীবনের তাঁর কাব্যগুলির নামকরণ-ই তার যথাযথ প্রমাণ – সন্ধ্যাসংগীত, প্রভাতসংগীত, ছবি ও গান, কড়ি ও কোমল  ইত্যাদি। এমনকি যে কাব্যের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান; তা-ও গীতাঞ্জলি। তাঁর রচিত অসংখ্য কবিতা-ই গানের রূপ পেয়েছে। ব্যক্তিজীবনে তিনি তাঁর কাব্যরচনার প্রেয়সীরূপে পেয়েছিলেন তাঁর ‘নতুন বৌঠান’ তথা কাদম্বরী দেবী-কে। তিনি যখন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে আসেন; তখন বয়সে তিনি বালিকা। তাই সেই ছবিই পরবর্তীত...

মাতৃরূপেণ—৩ শ্রীচৈতন্যমঙ্গলে দুর্গা—চৈতন্যময় নন্দ

    শ্রীচৈতন্যমঙ্গলে দুুর্গা

—শ্রী চৈতন্যময় নন্দ। মুগবেড়িয়া। পূর্ব মেদিনীপুর। 


ভক্তকবি শ্রী লোচন দাস তাঁর “শ্রীচৈতন্যমঙ্গল” কাব্যে বিরজা দুর্গার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন । নীলাচল যাত্রার পথে রেমুনায় ক্ষীরচোরা মন্দির দর্শন করে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব সপার্ষদ পৌঁছলেন যাজপুর বিরজা ক্ষেত্রে। পুণ্যতোয়া বৈতরণীর তীরে এখানে আছে অসংখ্য দেবালয়। যাজপুর একান্নপীঠের এক অন্যতম মহাপীঠ । এই বিরজা ক্ষেত্রে আদ্যাশক্তি মহামায়া সতী দেবীর নাভিদেশ পতিত হয়েছিল। এখানকার পীঠাধিষ্ঠাত্রী হলেন জগন্মাতা শ্রী শ্রী বিরজাদেবী। এই মহামাতৃকার মূর্তি দ্বিভুজ , সিংহবাহিনী ও মহিষাসুরমর্দিনী। এই সর্বসিদ্ধিদায়িনী মহাবিদ্যা উৎকলে পরম ভক্তিতে আরাধিতা অনন্ত কাল ধরে। “বিরজা ঔড্রদেশে চ”—এই শাস্ত্রবাণী আজও প্রতিধ্বনিত । এক পৌরাণিক আখ্যানে দেওয়া আছে প্রজাপতি ব্রহ্মা এই ক্ষেত্রেই বসে প্রথম এক যজ্ঞ অনুষ্ঠান করেছিলেন । সেই তপঃপ্রভাবে যজ্ঞকুণ্ড থেকেই বিরজাদেবীর আবির্ভাব। মহাভারতের বনপর্বে উল্লেখ আছে বিরজাতীর্থে পাণ্ডবদের আগমনের সংবাদ। বিভিন্ন পুরাণ ও তন্ত্রশাস্ত্র বৈতরণী কূলে বিরজাতীর্থ প্রসঙ্গে মুখর। শ্রীচৈতন্যের সময়ও এই দেবী মন্দির ছিল কারুকার্যখচিত , ঐশ্বর্যমণ্ডিত ও দর্শনীয়। 

শ্রীমন্মহাপ্রভু স্বপরিজন সহ এখানে দশাশ্বমেধ ঘাটে স্নান সেরে আদি বরাহ মন্দিরে পুজো দিয়ে তারপর একাকী বেরিয়ে পড়লেন বিরজাদেবীর মন্দিরে । “সর্বলোকৈকপাবনী” বিরজা মাতার মুখপদ্ম দর্শন মাত্রেই সন্ন্যাসী শিরোমণির আরক্ত নয়ন দুটি জলপূর্ণ হল।

সর্বদুর্গতিহরা দুর্গার দিব্যরূপ দর্শন করে শ্রীগৌরহরি প্রেমে উন্মত্ত হয়ে হাততালি দিয়ে মধুর স্বরে নাম করতে করতে বিহ্বল ভাবে নাচতে লাগলেন। শ্রীক্ষেত্রে নির্বিঘ্নে শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের দর্শন পাওয়ার জন্য দেবীর কাছে ভক্তিভরে প্রণাম নিবেদন করে কৃপাভিক্ষা করলেন পরিব্রাজক শ্রীচৈতন্য । তারপর উপস্থিত সবাই কে আলিঙ্গন করলেন। সেখানে শত শত মাতৃভক্তের মধ্যে প্রেমতরঙ্গ উত্থিত হল। আনন্দিত মনে তিনি আবার ফিরে এলেন নিত্যানন্দ প্রমুখ অপেক্ষমান পার্ষদদের কাছে। শ্রীলোচন দাস তাঁর "শ্রীচৈতন্যমঙ্গল"-এ এই প্রসঙ্গে লিখছেন—

"আনন্দ হৃদয়ে যায় বিরজা দেখিতে।

বিরজা মহিমা কেবা পারয়ে কহিতে।।

কোটী কোটী পাতক নাশয়ে দর্শনে।

বিরজা দেখিয়া প্রভু হরষিত মনে।।"

  মহাপ্রভুর  চরণচিহ্ন 


           



Comments

  1. জয় মা বিরজা🙏
    জয় নিতাই গৌরহরি

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

মাতৃরূপেণ—১২, 'অন্নপূর্ণে সদাপূর্ণে....'—শ্রীজীবশরণ দাস

কালীকথা-৩—পরমব্রহ্ম শবরূপ তাই — ড. অর্ঘ্য দীপ্ত কর

মাতৃরূপেণ—৫, বঙ্গ-মননে পরিবার-সমন্বিতা দুর্গা দর্শন—রাধাবিনোদ ঠাকুর