Posts

রবীন্দ্র-আলোকে ললিত ভারতী—সমীপেষু দাস

Image
  রবীন্দ্র-আলোকে ললিত ভারতী কাব্যসরস্বতী কোনো মন্দিরের বন্দিনী দেবতা নন                                                                                                       ( মধুমঞ্জরি, বনবাণী )                        রবীন্দ্রনাথ কাব্য ও সংগীতকে কখনওই পৃথক ব’লে ভাবতেন না। প্রথম জীবনের তাঁর কাব্যগুলির নামকরণ-ই তার যথাযথ প্রমাণ – সন্ধ্যাসংগীত, প্রভাতসংগীত, ছবি ও গান, কড়ি ও কোমল  ইত্যাদি। এমনকি যে কাব্যের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান; তা-ও গীতাঞ্জলি। তাঁর রচিত অসংখ্য কবিতা-ই গানের রূপ পেয়েছে। ব্যক্তিজীবনে তিনি তাঁর কাব্যরচনার প্রেয়সীরূপে পেয়েছিলেন তাঁর ‘নতুন বৌঠান’ তথা কাদম্বরী দেবী-কে। তিনি যখন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে আসেন; তখন বয়সে তিনি বালিকা। তাই সেই ছবিই পরবর্তীত...

জগদ্ধাত্রী পুজোর রচনা— জগন্মাতা জলেশ্বরী—সমীপেষু দাস

Image
  জগন্মাতা জলেশ্বরী কৃষ্ণনগরবাসীর কাছে এক পরম উৎসব জগদ্ধাত্রী পুজো। এই পুজোর ইতিহাস নিয়ে ঐতিহাসিকরা একাধিক বিশ্লেষণ করেছেন। সেখানে এই পুজো বঙ্গেদেশে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কর্তৃক আদৌ প্রচলিত কিনা, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং বিশেষতঃ তা কোন্ সময়ের তাও জানার চেষ্টা করা হয়েছে। ‘নবদ্বীপ-মহিমা’ (কান্তিচন্দ্র রাঢ়ী) , ক্ষিতীশ-বংশাবলি-চরিত (কার্ত্তিকেয়চন্দ্র রায়) থেকে শুরু করে একালের ডঃ অলোককুমার চক্রবর্তী-র ‘মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ’ সর্বত্রই এই পুজো নিয়ে কিছু না কিছু ইতিহাসের তথ্য দিয়েছে। মহারাজা আলিবর্দি খাঁ অথবা মীরকাশিম অথবা মীরজাফর যে কোনও কারোর দ্বারা বন্দি হয়েছিলেন এবং সেই সময়ে সেই বছরে নদিয়া-রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠিত ‘রাজরাজেশ্বরী’ দুর্গাপুজোয় উপস্থিত না থাকতে পেরে তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হন। তাই দেবীর স্বপ্নাদেশে একজন কুমারী রূপে দেবীকে দেখেন এবং কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে সপ্তমী, অষ্টমী এ নবমীকৃত্য সম্পন্ন ক’রে ওই রূপে পুজো করেন। সেই থেকেই কৃষ্ণনগরে তথা তৎকালীন ‘সুবে-বাংলা’-য় ঘটা ক’রে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়। তবে ডঃ অলোককুমার চক্রবর্তীর মতে এই পুজো ১৭৫২ সালের প...

ছট্ পূজার বিশেষ রচনা—সূর্য- বৈদিক আঙ্গিকে—বুদ্ধদেব ঘোষ

Image
  সূর্য- বৈদিক আঙ্গিকে —বুদ্ধদেব ঘোষ  ছাত্র, রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এড‍্যুকেশনাল্ অ্যান্ড্ রিসার্চ্ ইন্স্টিটিউট্, বেলুড় মঠ সূর্য উপাসনা ভারতীয় সমাজে ও পরম্পরায় এক সর্বসময়ের অবিচ্ছেদ্য বিষয়। পরমকরূণাময়ী শ্রুতি সূর্য্যের মাহাত্ম্যকীর্তন করেছেন সতত- সূর্য় আত্মা জগতস্তস্থুশ্চ। সূর্যের গতিপথে বিভিন্ন সময়ের তার অবস্থান চিহ্নিত করে তারই উপাসনা আমাদের পরম্পরায় সন্ধ্যা বন্দনা নামে গৃহীত। বৈদিক ঋষি সেই গগনরাজ সূর্য্যের অত্যাশ্চর্য্য রূপ ও বিস্ময়কর শক্তিকে অনুধাবন করে তার স্তুতি গেয়ে উঠেছেন বারংবার। ভারতেরও বিখ্যাত সূর্য্যমন্দিরগুলিও সেই প্রাচীন পরম্পরার এক উজ্জ্বল নিদর্শন। এই সূর্য্যদেব হল তেজের স্বরূপ এবং জীবকূলের প্রত্যক্ষ দেবতা যিনি আরোগ্য কারীও বটে, তিনিই আবার পুরাণে বর্ণিত হবেন জ্ঞানদাতা হিসাবে। ইশোপনিষদে দেখতে পাই অগ্নে নয়ে সুপথা রায়ে অস্মান্ ইত্যাদি মন্ত্রে দক্ষিণমার্গে গমনকারীর সূর্যকে নিজ তেজ সংবরণ করে তত্পশ্চাতে রহস্যময়ী অমৃতলোককে দেখার আকুতি। আমরা সূর্য্যকে- বিবস্বান, রবি, আদিত্য, পুত্র, পুষা, দিবাকর, সবিতৃ, মিত্র, ভানু, ভাস্কর, গ্রহপতি ইত্যাদি নামে জানি। এর মধ্...

কালীকথা-৬— খোয়াবনামা—প্রীতম বাগচী

Image
  খোয়াবনামা —প্রীতম বাগচী ছাত্র, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের বাড়ির কাছ দিয়েই 'কল - কল ' শব্দ করে বয়ে গেছে পুণ্যতোয়া ভাগীরথী নদী । এই ভাগীরথীর আদিবৃত্তান্ত  নিয়ে আমাদের মফস্বলে ততটা আগ্রহী কেউ নন ,  তাই ভাগীরথী নামখানি লুপ্ত হয়ে সকলের কাছে  জলের মতো সহজ  ' গঙ্গা  ' নামটিই আপন হয়ে উঠেছে ।   ' উত্তরবাহিনী গঙ্গা জল চলেছে দিবানিশি ।  '   আমাদের শহরের উত্তরদিকে  অর্থাৎ,  গঙ্গার ওইপারে যে ছোট্ট মফস্বলটি রয়েছে তার নাম ' হালিসহর '  ।   প্রায় আড়াইশো বৎসর পূর্বে এই প্রাচীন জনপদ  ' হালিসহর  ' সুবে বাংলার অন্তর্ভূক্ত ছিল ।  নবদ্বীপ অধিপতি মহাগুণাকর রাজা কৃষ্ণচন্দ্র প্রায়শই হালিসহরের কাছারিবাড়িতে আসতেন ,  এই অঞ্চলেরই  দুইজন বিশিষ্ট কবিরত্নের  তরজা শুনতে ।  একজন ,  বৈষ্ণবকবি অযোধ্যানাথ গোস্বামী  ওরফে আজু গোঁসাই ,  অন্যজন শাক্ত গীতিকার রামপ্রসাদ সেন ।  রামপ্রসাদ এই অঞ্চলে ' কালীর বেটা রামপ্রসাদ  ' বলেই অধিক পরিচিত ছিলেন ।   অন্যদ...

কালীকথা-৫—রামপ্রসাদী গান : লোকগীতি না ভক্তিগীতি ?—সমীপেষু দাস

Image
  রামপ্রসাদী গান : লোকগীতি না ভক্তিগীতি ?  —সমীপেষু দাস অধ্যাপক, বঙ্গবাসী ইভিনিং কলেজ         খ্রিস্টিয় আঠারো শতকে বাংলার সন্তান রামপ্রসাদ সেন তাঁর সাধনলীলায় যেভাবে শাক্তগীতিকে স্থান দিয়েছিলেন, তা অতুলনীয়। কুমারহট্টে ( বর্তমানে উত্তর চব্বিশ পরগণার হালিশহরে ) তাঁর জন্ম। জনশ্রুতি আছে নদিয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় একবার কুমারহট্টে ভ্রমণকালে তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হন। তারপরেই  তাঁর সভায় তাঁকে আমন্ত্রণ জানান কিন্তু সেই প্রস্তাব তিনি খারিজ করেন। তখন রাজা তাঁকে ‘কবিরঞ্জন’ উপাধি দেন এবং কিছু নিষ্কর জমি দান করেন। কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র যে কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের সভাতেই ছিলেন,তার বহুবিধ প্রমাণ রয়েছে এবং তিনি তাঁর ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যে রাজসভার বর্ণনাও করে গেছেন অতিরঞ্জিত ও আংকারিক ভঙ্গিতে- চন্দ্রে সবে ষোল কলা হ্রাসবৃদ্ধি তায়। কৃষ্ণচন্দ্র পরিপূর্ণ চৌষট্টি কলায়।।  ……..  চন্দ্রের হৃদয়ে কালী কলঙ্ক কেবল।  কৃষ্ণচন্দ্র হৃদে কালী সর্ব্বদা উজ্জ্বল।। কিন্তু রামপ্রসাদ সেনের রচনায় সেরকম কোনও স্তুতি নেই। তাঁর পদাবলির মাত্র একাধিক স্থানেই আমরা কৃষ্ণচন্দ্...

কালীকথা-৪—কালীর গ্রাম আমাদপুর—সৌম্য বোস

Image
  কালীর গ্রাম আমাদপুর               —সৌম্য বোস                    কম্পিউটার শিক্ষক ও ভ্রমণপিপাসু              কালী ঠাকুরের চার বোনের কথা শোনা যায় এই বাংলারই এক গ্রামে। বাংলাজুড়ে রয়েছে কালীর নানা মাহাত্ম্য কাহিনি। তবে এই কাহিনিটা একেবারে অন্যরকম। এই কাহিনির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একটি গ্রামের গল্প কথা। যে গ্রামে কালির চার বোন বাস করেন। বড়মা, মেজমা, সেজমা, ছোটমা। বর্ধমানের মেমারির আমাদপুরে ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই নামে দেবীর পুজো হয়ে আসছে। এই চার বোন ছাড়াও গোটা গ্রামে রয়েছে কমবেশি ২০০টি কালী। সিদ্ধেশ্বরী, বুড়িমা, ডাকাত কালী, ক্ষ্যাপা মা, আনন্দময়ী মা ইত্যাদি ভিন্ন নামে মা কালী এখানে পূজিত হন। এই জন্য এই গ্রাম মানুষের কাছে কালী গ্রাম নামেই পরিচিত।  শুধু কালী নয়, এখানে ভৈরবের পুজোও হয়। সঠিক ইতিহাসটা কী? সেটা এলাকার কেউই জানেন না। তবে লোকমুখে নানা কাহিনি শোনা যায়। আর সেই সব নিয়ে বাংলার এই গ্রামে দুর্গা নয়, কালীপুজোই আসল। বর্ধমানের আমাদপুর এ...

কালীকথা-৩—পরমব্রহ্ম শবরূপ তাই — ড. অর্ঘ্য দীপ্ত কর

Image
  পরমব্রহ্ম শবরূপ তাই দেবী দক্ষিণকালিকার ধ্যানমূর্তিতে দেখা যায় যে স্বয়ং মহাদেব দেবীর চরণতলে শববৎ শায়িত হয়ে রয়েছেন। এই মূর্তিভাবনা সংক্রান্ত একটি কাহিনি শোনা যায় যে একবার রণোন্মত্তা দেবী ক্রোধে হিতাহিতজ্ঞানশূন্যা হয়ে সমগ্র সৃষ্টি বিনাশ করতে উদ্যত হয়েছিলেন বলে তাঁকে শান্ত করতে মহেশ্বর তাঁর পথে শায়িত হয়ে থাকেন। দেবী ভুলবশত নিজ স্বামীর বক্ষে চরণ স্থাপন করেন এবং পরক্ষণেই সেই ভুল বুঝতে পেরে গ্লানি এবং লজ্জায়  জিহ্বাদংশন করেন। যদিও এই কাহিনিটি বৃহদ্ধর্মপুরাণ এবং অদ্ভুত রামায়ণে পাওয়া যায় বলে এটিকে পুরোপুরি অশাস্ত্রীয় বলে উড়িয়ে দেওয়া যায়না, তবুও মনে রাখতে হবে যে এই দুই গ্রন্থে মহাদেব দ্বারা রণোন্মত্তা দেবীকে উক্তভাবে শান্ত করার প্রসঙ্গটি থাকলেও, ‘লজ্জা বা গ্লানি’-কাতরা দেবীর জিহ্বা দংশনের উল্লেখ নেই। এক্ষেত্রে বলে রাখা উচিৎ যে এসম্বন্ধীয় ঐতিহাসিক তথ্য গুলো বিচার করলে স্বীকার করতেই হবে যে এই কাহিনিটি তৈরি হওয়ার বহু আগে থেকেই দেবীর শবারূঢ়া মূর্তিটি প্রচলিত ছিল। ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে কালীমূর্তির বিবর্তনধারাটি দেখলে জানা যাবে যে কালীর প্রাচীনতম রূপ ছিলেন চামুণ্ডা, যিনি মূলস্রোতীয় স্মা...